হরিতকী
হরিতকী একটি ভেষজ উদ্ভিদ।
বাংলাদেশে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল প্রভৃতি স্থানে বেশি পাওয়া যায়। ভারত বর্ষে বিভিন্ন স্থানে এটি পাওয়া যায়।
হরিতকী ফল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় এবং রন্ধনশিল্পে বহুল ব্যবহৃত ভেষজ ফল।
বর্ণনা
মধ্যম থেকে বৃহদাকারের পত্রমোচী বৃক্ষ।
উচ্চতায় ২০-৩০ মিটার হয়। বাকল গাঢ় বাদামী।
বাকলে লম্বা ফাটল থাকে। পাতা লম্বাকৃতির, ৭-২০ সে.মি. হয়।
ফুল সাদা বা হলুদ হয় এবং স্পইকে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। ফল ড্রপ, ঝুলন্ত, চার সে.মি লম্বা সবুজাভ হয়।
কাঠের রং ঘন বেগুনি, খুব শক্ত, ভারী ও মাঝারি আকারের টেকসই।
ভেষজ চিকৎসকরা হরিতকি গাছকে মায়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন।
তারা বলেন, মানুষের কাছে এ বৃক্ষ মায়ের মতোই আপন। মানুষের শরীরে সংক্রমিত প্রায় সব রোগ-ব্যাধির ওষুধ হিসেবে হরিতকির ব্যবহার রয়েছে।
সব রোগ হরণ করে বলেই প্রাচীন শাস্ত্রকাররা এর নাম দিয়েছেন হরিতকি।
ঔষধি ব্যবহার
১) অর্শ রোগে হরিতকি চূর্ণ তিন থেকে পাঁচ গ্রাম পরিমাণ ঘোলের সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে খেলে সেরে যাবে।
২) রক্তার্শে আখের গুড়ের সঙ্গে হরিতকি গুঁড়া মিশিয়ে খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই সুফল পাওয়া যায়।
৩) চোখের রোগের ক্ষেত্রে হরিতকি ছেঁচে পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি দিয়ে চোখ ধুতে হবে।
৪) পিত্ত বেদনায় সামান্য গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে হরিতকি গুঁড়া সেবন করতে হয়।
৫) গলার স্বর বসে গেলে মুথা ও হরিতকি চূর্ণ মধুর সঙ্গে বেটে অথবা যোয়ানের সঙ্গে পান করলে স্বর স্বাভাবিক হয়।
৬) হরিতকি ফল হৃদরোগ, বদহজম, আমাশয়, জন্ডিস এবং ঋতুস্রাবের ব্যথায় খাওয়ানো হয়।
৭) ফলের রস জ্বর, কাশি, হাঁপানি, পেট ফাঁপা, ঢেকুর উঠা, বর্ধিত যকৃত ও প্লীহা, বাতরোগ ও মূত্রনালীর অসুখেও বিশেষ উপকারী।
৮) কাঁচা ফল রেচক হিসেবে কাজ করে।
৯) আধুনিক ভেষজ চিকৎসকরা ফুঁসফুঁস ও শ্বাসনালীঘটিত রোগে হরিতকি বহুল ব্যবহার করে থাকেন। কাশি ও শ্বাসকষ্টে হরিতকি খুবই কর্যকর।
১০) এছাড়া, ঘন ঘন পানির তৃষ্ণা কিংবা বমি বমি ভাব কাটাতেও হরিতকি ব্যবহৃত হয়।
১১) ত্রিফলা অর্থাৎ আমলকি, হরিতকি ও বহেরা এর প্রতিটির সমপরিমাণ গুঁড়ার শরবত কোলেস্টেরল কমাবার অর্থাৎ প্রেসার বা রক্তচাপ কমাবার মহৌষধ।
এক ওষুধ গবেষক দলের মতে, আধুনিক যে কোন এ্যালোপ্যাথিক ঔষধের তুলনায় ত্রিফলা কোলেস্টেরল কমাবার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ফলপ্রসূ।